
রাজশাহী কলেজ বাংলাদেশের রাজশাহী শহরে অবস্থিত একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ১৮৭৩ সালে স্থাপিত রাজশাহী কলেজ ব্রিটিশ আমল থেকেই শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠের মর্যাদা পেয়ে এসেছে। বিখ্যাত এই কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বরেন্দ্র অঞ্চলের জমিদারদের উদ্যোগে। রাজশাহী শহরের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত এই কলেজের ইতিহাস। দুবলহাটীর রাজা হরলাল রায় বাহাদুর এর আর্থিক সহায়তায় রাজশাহী কলেজ ১৮৭৩ সালে স্থাপিত হয়।
রাজশাহী কলেজ স্থাপনের অল্প সময়ের মধ্যেই তা পূর্ববঙ্গ, উত্তরবঙ্গ, বিহার, পুর্নিয়া এবং আসামের একমাত্র উচ্চশিক্ষার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। ১৮৭৩ সালে এপ্রিলের ১ তারিখে রাজশাহী জেলা স্কুলে (বর্তমান কলেজিয়েট স্কুল) এফএ (ফার্স্ট আর্টস) শ্রেণী চালুর মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হয়। প্রথম ব্যাচে ১ জন মুসলমানসহ মাত্র ৬ জন ছাত্র নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও ১৯৩০ সালে এর ছাত্র সংখ্যা ১০০০ জনে উন্নীত হয় এবং এর পরবর্তী বছরে ছাত্রী ভর্তির অনুমতি পাওয়া যায়।
রাজশাহী জেলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরগোবিন্দ সেন এই কলেজের প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন। রাজশাহী এসোসিয়েশেন প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দিঘাপতিয়ার রাজা প্রমদানাথ রায় বাহাদুর স্নাতক কোর্স চালু করার জন্য এ কলেজে ১,৫০,০০০ টাকা দান করেন। ১৮৭৭ সালের অক্টোবর মাসে স্নাতক কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পায় এবং ১৮৭৮ সালে স্নাতক কোর্স চালু হয়। কলেজের প্রথম ভবন (বর্তমান প্রশাসনিক ভবন) নির্মাণ করা হয় ১৮৮৪ সালে। পি.এন. হোস্টেল এ কলেজের প্রথম হোস্টেল যা রাজশাহী এসোসিয়েশন দ্বারা ১৮৯৪ সালে স্থাপন করা হয়। ১৯০২ সালে পুঠিয়ার রাণী হেমন্তকুমারী তাঁর নামে একটি হোস্টেল নির্মাণ করেন। বিনা খরচে সংস্কৃত শিক্ষার জন্য ১৯০৪ সালে এ কলেজের অধীন মহারাণী হেমন্তকুমারী সংস্কৃত কলেজ স্থাপন করা হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন স্নাতকোত্তর কলেজ হিসেবে ১৮৮১ সালে এম.এ কোর্স এবং ১৮৮৩ সালে আইন কোর্স পরিচালনার অনুমতি লাভ করে। কয়েক বছরের মধ্যে এ কলেজের ৮ জন শিক্ষার্থী এমএ ডিগ্রি এবং ৬০ জন শিক্ষার্থী আইনে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯০৯ সালে এম.এ ও আইন কোর্স দুইটি বন্ধ করে দেয়া হয়। রাজশাহী কলেজ পুর্ব পাকিস্তানের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রথম অনুমোদিত কলেজ এবং পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন লাভ করে ১৯৫৩ সালে। এ কলেজে আই.কম, বি.কম (পাস) এবং বি.কম (সম্মান) কোর্স চালু হয় যথাক্রমে ১৯৫২, ১৯৫৪ এবং ১৯৬১ সালে। ১৯৯৪ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন পুনরায় এম.এ কোর্স চালু করা হয়। ১৯৯৬ সালে এ কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক কোর্সে পাঠদান বন্ধ করে দেয়া হয় এবং তা পুনরায় ২০১০ সালে তা চালু করা হয়।
বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ সমূহের মধ্যে রাজশাহী কলেজ সেরা অবস্থানে আছে।
Leave a Reply
Be the First to Comment!